মোঃহাসানুজ্জামান and মেহেরুন্নেসা বিনতে মাহাবুব

married: 2024-04-12
Successful Story
Successful Story
Successful Story
একটি ইসলামিক বিবাহের গল্প!


অযোগ্য, অসুন্দর ও দরিদ্র আমাকে তিনি (মেয়ে) পছন্দ করেছে মাত্র দ্বীনদারিত্বের জন্য। যদিও আমি বড্ড গাফেল। তবে হালালভাবে রুটি রুজি অর্জন ও সৎ পথে থাকতে পছন্দ করি।


সময়টা ছিলো বাদ মাগরিব, মৃদু বাতাস বইছিল সেদিন। মেয়ের পরিবার থেকেই আমাকে প্রস্তাব দেয়া হয় আলহামদুলিল্লাহ। তবে তার ফুফাতো বোনের জামাই আমার সাথে সর্বপ্রথম কথা বলে, তার বাবা-মা নয়। এরপর পারিবারিকভাবে আগানোর চেষ্টা চলে। দুজনেরই পরিবার দ্বীনদার না হওয়ায় প্রথম থেকেই বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিলো। অনলাইনের মাধ্যমে বিয়ে হলে সেটা ভালো কিছু হয় নাকি! ইত্যাদি আরও অনেক কথা। আমাদের দুই পরিবারের কয়েকজন এই বিয়ে নিয়ে অনেক কান্না ভোগ করেছে। আমি তাদেরকে ভুলবোনা কখনোই। যদিও তারা পূর্ণ দ্বীনদার না, কিন্তু বিয়ের ব্যপারে তাদের মেহনত ও কান্না সত্যিই হৃদয়ে রেখাপাত করে আছে। এই লম্বা সময়ে অনেককিছুই পার করেছিলাম আমরা, যায়হোক..।


প্রায় ৪ মাস যুদ্ধের পর সব আত্মীয় স্বজনকে রাজি করিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় তাকে (মেয়ে) দেখতে গেলাম, বিয়ে করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে (মেয়ে) নন মাহরাম (আমার চাচা) থেকে বাচতে গিয়ে ঝামেলা হয়ে গেলো। চাচা ভীষণ রকমের অসম্মানবোধ করলেন বিয়েই করাবেনা এখানে। এছাড়াও আমাদের পরিবার ও আত্মীয়রা নানা রকমের শক্ত কথা বলতে শুরু করলো। তবুও সে (মেয়ে) পর্দার ব্যপারে কঠর ছিলো। আর আমার তো সম্মান ও স্নেহ যা ছিলো তা যেনো মাটিতে পিশে মিশাচ্ছিলো সবাই। আমাকে জোর করেই বের করে গাড়িতে উঠালো। এসবের মধ্যেই আমি মেয়ের পরিবার থেকে মাফ চেয়ে বিদায় নিয়ে নিজ বাড়িতে আসলাম।


এশার পর আমাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে বিশাল বিচার বসলো। আমাকে ৩ জন অর্ধেক পর্দা করা মেয়ে দেখাতে চাচ্ছিলো, তারা নাকি এই মেয়ের চেয়ে অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি তাদের ছবি না দেখেই জিজ্ঞেস করলাম তাদের কি মুখ খোলা? উত্তরে বললো হ্যাঁ। আমি বলেছি যারা পর্দা করে তারা কখনো এভাবে ছবি তুলেনা। আর সুন্দর দিয়েই সবসময় সুখী হওয়া যায়না, যায়হোক এভাবেই অনেক্ষণ যুক্তিতর্ক ও কথা কাটাকাটি চলতে থাকলো। আমি আদব বজায় রেখেই সব কথা বলছিলাম।


তারা আমাকে দুটি শর্ত দিলো।
১) তাদের পছন্দমতো মেয়েকে বিয়ে করতে হবে ।

২) আর তাকেই (মেয়ে) যদি বিয়ে করি তাহলে আমাকে আত্মীয়স্বজনরা ত্যাজ্য করে দিবে।


আমি বলেছি সামান্য পর্দার জন্য বিয়ে ক্যন্সেল হবে এটা অন্তত আমি মানতে পারবোনা। আমি বললাম সমাজকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে অসুন্তষ্ট করতে পারবোনা। অতএব তাকে বিয়ে করার জন্য যদি আত্মীয় স্বজন কেনো পুরা পৃথিবীও আমার বিপক্ষে থাকে তাহলেও আমি তাকেই বিয়ে করবো ইনশাআল্লাহ।


দুই পক্ষ থেকেই পরিবারিক বিশাল চাপ সহ্য করতে হচ্ছিলো তখন। নিজেকে অনেক হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় পার করতে হয়েছে। ঠিক তখনই মেয়ের আব্বু ও খালা আমাকে সাপোর্ট করেছে। নিয়ত করলাম আবারও সবকিছু ঠিকঠাক করতে হবে।


বেশ কিছুদিন কেটে গেলো এভাবেই। আমার আব্বু, চাচ্চু ও ফুফুকে রাজি করালেন একপ্রকার জোর করে। তবে কথা হচ্ছে মেয়েকে যেভাবে রাখবে সেভাবেই থাকা লাগবে। এতো পর্দা করা যাবেনা। সবার সাথে কথা বলতে হবে ইত্যাদি। মেয়ের পরিবার সবকিছুই মেনে নিলো( কিন্তু আমরা যেহেতু গ্রামে থাকবো না সেহেতু এসব দিয়ে শুধু শান্তনা দিয়েছিলাম, আমাদের প্ল্যান ভিন্ন)। এবার মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলের বাড়িতে যাওয়ার পালা, আলাপ ভালোই হয়েছে কিন্তু আমাদের বাড়ি সুন্দর না দেখে, বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেনা। মেয়েকে সাফ জানিয়ে দিলো এমন ঘরে তোমাকে ছেড়ে দিতে পারিনা। ওই ছেলের সাথে তোমার বিয়ে হবেনা। আমরা ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দিবো।


মেয়েটা এসব সহ্য করতে পারেনি। সেদিনই প্রথম তার কান্না জড়িত কথাগুলো শুনি। আমাকে ভয়েস দিয়ে জানালো, সে আর বেঁচে থাকতে পারছেনা ,এত কটু কথা কোনোদিন শুনতে হয় নাই। সে আল্লাহর কাছে চলে যেতে চায়। আমি যেনো তার বাড়িতে গিয়ে সব ঠিকঠাক করি।


আমি সেদিন কান্না করেছিলাম। আর কঠিন চ্যলেঞ্জ নিলাম যে, আমি যে কোনোকিছুর বিনিময়ে হলেও সবকিছু ঠিকঠাক করে আমার হৃদয়ের শাহজাদিকে আমি জয় করবোই ইনশাআল্লাহ। আমি নিয়মিত রোজা রাখছিলাম। তাহাজ্জুতে আল্লাহর কাছে চোখের পানি দিয়ে শুধু চেয়েছি আর চেয়েছি।


মেয়ের বাবার সাথে কথা বলে বুঝালাম আমরা গ্রামে থাকিনা, আর বছরে একবার যাই। তাই ওখানে অমন অবস্থা। আপনি একবার ঢাকায় আসুন, আমার পরিবার ও বাড়ি দেখে যান।


সেদিন অফিস শেষ করেই নাইটে রওনা দিলাম। গ্রাম থেকে মেয়ের আব্বুকে ঢাকায় নিয়ে আসলাম। ঢাকায় আসার আগে সব সাজিয়ে রেখেছিলাম কখন কোন খাবার রান্না হবে, কি কি আইটেম ও নাস্তা থাকবে, কোনো বিছানায় কোন চাদর ও কোথায় কি থাকবে, উনি কোথায় থাকবে, কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবো ইত্যাদি সব প্লান করে বাসায় জানিয়ে দিলাম। আমার বেতনের পুরাটাই খরচ করেছিলাম ওই দুই দিনে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি দেখানোর, বোঝানোর যায়হোক শেষমেষ আমি সফল হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমার পরিবার আমাকে সাপোর্ট না করলে আমি কিছুই পারতাম না। সত্যিই আমার পরিবার ভালো আলহামদুলিল্লাহ।


এবার দুই পরিবারে আবার সুন্দর আলাপচারিতা চলতে থাকলো। দুই পরিবারের মানুষই এখন সবকিছু মেনে নেয়ার চেষ্টা করছে। এরপর বিয়ের তারিখ ঠিক হলো ঈদের ছুটির শুক্রুবারে। সেই সুবাদেই আমাদের বিয়ের তারিখ হলো ১২.০৪.২৪ ইং তারিখ। সমস্ত আয়োজন চলতে থাকলো দুই পরিবার থেকে। এরপর দীর্ঘ ৮ মাস পর সেই কাঙ্খিত সময় চলে আসলো। আলহামদুলিল্লাহ ❣️


যখন আমাকে কবুল বলাচ্ছিলো জানিনা কেনো এতো কান্না আসছিলো, অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছিলাম। আল্লাহর দেয়া নেয়ামত পেতে যাচ্ছি একদম আপন করে। আল্লাহ পাক অনেক কঠিন অবস্থা থেকে তুলে এনে সহজ করেছেন সেসব ভেবেই কান্না পাচ্ছিলো।


মেয়েকে দেনমোহর দিলাম মাত্র ৩০ হাজার টাকা আর একটা নাক ফুল। আমার সামর্থ এতটুকুই, মেয়ের পরিবারও আনন্দের সাথে সব গ্রহণ করে নিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। অবশ্য আগে থেকেই মোহর নিয়ে কথা বলে নিয়েছিলাম।


বিয়ের পর আমরা অনেক ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সত্যিই আমি যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে হাজারগুন বেশি পেয়েছি। যেনো মনেহয় পূর্বে কোনো ঘটনায় ঘটেনি। কিন্তু সেই সময়ের কথাগুলো মনেহলে এখনো থমকে যাই, অঝরে কান্না আসে। এই কান্না আনন্দের কান্না। রবের বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়ার কান্না।


বিঃদ্রঃ  আইডিয়াল নিকাহ এর নিকট আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। দোয়া করি রব্বে কারীম এই পেইজে আরও বারাকাহ দান করুন।
আমারা (আমি ও আমার বিবি) একসাথে এই জীবন পার করতে চাই জান্নাতের রাস্তায়। আল্লাহ আমাদেরকে সহ সকল দাম্পত্য জীবন সুখের করুন (আমিন)।

❤️❤️মোঃহাসানুজ্জামান ❤️❤️





We may use cookies or any other tracking technologies when you visit our website, including any other media form, mobile website, or mobile application related or connected to help customize the Site and improve your experience. learn more